বাংলা উপন্যাস সাহিত্যে শরৎচন্দ্র এমন একটি নূতন পথ ধরে অগ্রসর হয়েছেন যা বাঙলা কথাসাহিত্যের পরিধিকে প্রসারিত করে দিয়ে তার মধ্যে এনেছে এক অদৃষ্টপূর্ব বৈচিত্র্য। সংবেদনশীল হৃদয়, ব্যাপক জীবনজিজ্ঞাসা, প্রখর পর্যবেক্ষণশক্তি, সংস্কারমুক্ত স্বাধীন মনোভঙ্গি প্রভৃতির গুণে শরৎসাহিত্য লাভ করেছে এক অনন্যসাধারণ বিশিষ্টতা যা পরবর্তীকালের বাঙলা সাহিত্যের গতিপ্রকৃতিকে অনেকাংশে নিয়ন্ত্রিত করেছে।
শরৎচন্দ্রের সমস্ত...
বাংলা উপন্যাস সাহিত্যে শরৎচন্দ্র এমন একটি নূতন পথ ধরে অগ্রসর হয়েছেন যা বাঙলা কথাসাহিত্যের পরিধিকে প্রসারিত করে দিয়ে তার মধ্যে এনেছে এক অদৃষ্টপূর্ব বৈচিত্র্য। সংবেদনশীল হৃদয়, ব্যাপক জীবনজিজ্ঞাসা, প্রখর পর্যবেক্ষণশক্তি, সংস্কারমুক্ত স্বাধীন মনোভঙ্গি প্রভৃতির গুণে শরৎসাহিত্য লাভ করেছে এক অনন্যসাধারণ বিশিষ্টতা যা পরবর্তীকালের বাঙলা সাহিত্যের গতিপ্রকৃতিকে অনেকাংশে নিয়ন্ত্রিত করেছে।
শরৎচন্দ্রের সমস্ত উপন্যাস ও ছোট গল্পগুলিকে প্রধানত পারিবারিক, সামাজিক ও মনস্তত্ত্বমূলক – এই তিন শ্রেণীতে বিভক্ত করলেও তাঁর অধিকাংশ উপন্যাসের কেন্দ্রভূমিতে বিরাজমান রয়েছে বাঙালীর সমাজ সম্পর্কে এক বিরাট জিজ্ঞাসা এবং বাঙালির মধ্যবিত্ত শ্রেণীর অন্তরঙ্গ ও বহিরঙ্গ জীবনের রূপায়ণ। সমাজের বাস্তব অবস্থা নরনারীর জীবনভঙ্গিমা ও জীবনবোধকে নিয়ন্ত্রিত করে তাদের মানসলোকে যে সূক্ষ্ম জটিল প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে, শরৎসাহিত্যে আমরা পাই তারই সার্থক রূপায়ণ। বাঙালি মধ্যবিত্ত সমাজের দুঃখবেদনার এতবড় কাব্যকার ইতিপূর্বে দেখি নি আমারা। মূঢ়তায় আচ্ছন্ন সমাজব্যবস্থার নিষ্ঠুর শাসনে লাঞ্ছিত নরনারীর অশ্রুসিক্ত জীবনকথা অবলম্বন করে মানবদরদী শরৎচন্দ্র গদ্যবাহিত যে কতকগুলি উৎকৃষ্ট ট্রাজেডি রচনা করেছেন তাতে বাঙলা সমাজের অতিবিশ্বস্ত ও বহুচিত্রিত এক আলেখ্য উন্মোচিত হয়েছে আমাদের সামনে।
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উল্লেখযোগ্য উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে বড়দিদি, বিরাজবৌ, গৃহদাহ, পল্লীসমাজ, শ্রীকান্ত, পরিণীতা, চন্দ্রনাথ, দেবদাস, দত্তা, দেনা-পাওনা, পথের দাবী, শেষ প্রশ্ন, পণ্ডিতমশাই, বামুনের মেয়ে প্রভৃতি। এই অধ্যায়ে আমরা শরৎ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস সমূহের তালিকা তুলে ধরবো।
উপন্যাস: বড়দিদি, ১৯১৩; বিরাজবৌ, ১৯১৪; পরিণীতা, ১৯১৪; বৈকুন্ঠের উইল, ১৯১৫; পল্লীসমাজ, ১৯১৬; চন্দ্রনাথ, ১৯১৬; অরক্ষণীয়া, ১৯১৬; পন্ডিতমশাই, ১৯১৭; দেবদাস, ১৯১৭; চরিত্রহীন, ১৯১৭; শ্রীকান্ত ১, ১৯১৭; নিষ্কৃতি, ১৯১৭; শ্রীকান্ত ২, ১৯১৮; দত্তা, ১৯১৮; গৃহদাহ, ১৯২০; বামুনের মেয়ে, ১৯২০; দেনা পাওনা, ১৯২৩; নববিধান, ১৯২৪; পথের দাবী, ১৯২৬; শ্রীকান্ত ৩, ১৯২৭; শেষ প্রশ্ন, ১৯৩১; বিপ্রদাস, ১৯৩৫; শ্রীকান্ত ৪, ১৯৩৩; শুভদা, ১৯৩৮; শেষের পরিচয়, ১৯৩৯;